ইলিশ মাছের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচন অর্জন করল বাংলাদেশ
ভিউ পয়েন্টঃ প্রথমবারের
মতো ইলিশ মাছের পূর্ণাঙ্গ
জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মৎস্য বিজ্ঞানীরা।
প্রায় তিন বছর গবেষণার
পর দেশের বিজ্ঞানীরা এই
সফলতা অর্জন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য
উন্মোচনের দাবি করেন ইলিশ
জিনোম সিকোয়েন্সিং অ্যান্ড অ্যাসেম্বলি টিমের সমন্বয়ক ও
বাকৃবির ফিসারিজ বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল
আলম। পরে
ইলিশের গবেষণা কাজের শুরু,
নানা প্রতিকূলতা ও শেষ পর্যন্ত
রহস্য উন্মোচনের সাফল্য পর্যন্ত পুরো
গল্পটি তিনি তুলে ধরেন।
![]() |
ইলিশ মাছের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচনকারী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল-View Point |
ড. সামছুল আলম বলেন,
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উদীয়মান
তিন বিজ্ঞানীকে সঙ্গে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রম
এবং নিজেদের উদ্যোগে বঙ্গোপসাগর এবং মেঘনা নদী
থেকে ইলিশ সংগ্রহ করে
গবেষণা কাজ শুরু করি। পরে
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে ইলিশ
জিনোম প্রকল্পের অধীনে ফিসারিজ বায়োলজি
বিভাগের ল্যাবে গবেষণা কাজ
চলতে থাকে। ল্যাবে
ইলিশের ডিএনএ নিয়ে কাজ
করার পাশাপাশি পৃথকভাবে ডিএনএ প্রস্তুত এবং
প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা
হয়। পরে
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সহায়তায় তাদের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন
সার্ভার কম্পিউটারে বিভিন্ন বায়োইনফরমেটিক্স প্রোগ্রাম ব্যবহার করে সংগৃহীত প্রাথমিক
তথ্য থেকে ইলিশের পূর্ণাঙ্গ
ডি-নোভো জিনোম অ্যাসেম্বল
সম্পন্ন করা হয়।
অধ্যাপক সামছুল আলম জানান,
ল্যাবে ইলিশ জিনোম সিকোয়েন্স
নিয়ে হাই পাওয়ার মেশিনে
নেক্সট জেনারেশন ডিএনএ সিকোয়েন্স প্রস্তুত
করা হয়। গবেষণায়
ইলিশের জিনোম সিকোয়েন্স এনালাইসিস
করে ইলিশে ৭৬ লাখ
৮০ হাজার নিওক্লিওটাইড পাওয়া
যায় যা পরিমাণের দিক
থেকে মানুষের শরীরে জিনোমের প্রায়
এক চতুর্থাংশ।
তিনি আরও জানান, ইলিশের
জিনোম সিকোয়েন্স এনালাইসিস করে ২১ হাজার
৩২৫টি মাইক্রোস্যাটেলাইট (এসএসআর) ও ১২ লাখ
৩ হাজার ৪০০টি সিঙ্গেল
নিওক্লিওটাইড পলিমরফিন (এসএনপি) পাওয়া যায়।
গবেষণা শেষে গত বছরের
৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক জিনোম
ডাটাবেজে ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনে
ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স জমা
করা হয়। এ
ডাটাবেজ থেকে ইলিশের জিনোমের
তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বর্তমানে
যেকোনো দেশের বিজ্ঞানীরা ইলিশ
নিয়ে কাজ করতে পারবেন।
![]() |
ইলিশ মাছ-View Point |
ইলিশ জিনোম প্রকল্পের সমন্বয়কারী
বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. সামছুল
আলমের সঙ্গে গবেষণা কাজে
অংশ নেন পোল্ট্রি বিজ্ঞান
বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বজলুর
রহমান মোল্লা, বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল
ইসলাম ও ফিসারিজ বায়োলজি
অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম
কাদের খান।
অধ্যাপক ড. মো. বজলুর
রহমান মোল্লা জানান, জীবনরহস্য
উন্মোচনের ফলে ইলিশের উৎপাদন
বৃদ্ধি ও গুণগত মান
বাড়ানো সম্ভব হবে।
এছাড়া এই কাজ নতুন
বিজ্ঞানীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। জিনোম
নিয়ে গবেষণা কাজ করতে
আগ্রহী হবেন তারা।
গবেষণা কাজে জড়িত অধ্যাপক
ড. মুহাম্মদ গোলাম কাদের খান
বলেন, ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচন
দেশের জন্য এবং বাংলাদেশ
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের জন্য একটি মাইলফলক
হয়ে থাকবে। এর
মাধ্যমে ইলিশের স্বাদ-গন্ধ
থেকে শুরু করে ইলিশের
আবাসন এবং কী পরিমাণ
স্টক আছে সে সম্পর্কে
জানা যাবে।
![]() |
ইলিশ মাছ--View Point |
ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচন হওয়ায় বৈশ্বিক জলবায়ু
পরিবর্তনের ফলে ইলিশের ওপর
কী প্রভাব পড়ছে এবং
এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে খুব
দ্রুত জানা যাবে বলে
দাবি করেছেন গবেষণা সহযোগী
অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল
ইসলাম। তিনি
জানান, পরিবর্তনশীল পরিবেশে ইলিশ মাছকে খাপ
খাওয়ানোর জন্য উপযোগী জিন
ভবিষ্যতে আবিষ্কার করা যাবে।
তিনি আরও জানান, জীবনরহস্য
উন্মোচনের কারণে চাহিদা মোতাবেক
ইলিশ মাছ পুকুরে চাষ
করা যাবে কিনা এই
নিয়েও কাজ করার সুযোগ
হয়েছে।
এদিকে
বিদেশি সাহায্য ছাড়াই নিজস্ব ল্যাবে
ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচন করতে পেরে খুশি
বিজ্ঞানীরা। গত
বছর বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক
নির্দেশক বা জিআই পণ্য
হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর
আগের বছর বাংলাদেশের জামদানি
জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি
পায়। সংশ্লিষ্টরা
মনে করছেন বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায়
ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচন অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে মাকসুদুল
আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশি গবেষকরা পাটের জীবনরহস্য (জিনোম
সিকোয়েন্স) উন্মোচন করেন।
No comments