Header Ads

Best Electronics

চাঁদ ও সূর্যের গল্প



চাঁদ সূর্যের গল্প
আরিফুন নেছা

এক দেশে ছিল এক পৃথিবী তার খুব মন খারাপ কেন মন খারাপ, জানো? কারণ, তার কোনো বন্ধু নেই তাই সে বন্ধুর খোঁজ করতে লাগল খুঁজতে খুঁজতে সে বন্ধু পেল তা- একটি নয়, দুটি বন্ধু বন্ধু দুটির নাম রাত আর দিন পৃথিবীর সঙ্গে তাদের খুব ভাব কিন্তু রাত আর দিনের কখনো দেখা হয় না পৃথিবী যখন নানা কাজে ব্যস্ত থাকে, তখন সে দিনের সঙ্গে থাকে আর যখন সে ক্লান্ত হয়ে যায়, ক্লান্ত হয়ে যায় দিনও তখন তারা ঘুমানোর জন্য রাতের সঙ্গে থাকে ওরা তো ঘুমায়, কিন্তু রাত তো একা জেগে থাকে তাই সেও বন্ধুর খোঁজ করে আর রাতের দুঃখ দেখে তার অনেক বন্ধু হাজির হয় এর মধ্যে চাঁদ আর তারাদের সঙ্গে তার বেশ ভাব হয় তারারা আবার লাখো বন্ধু নিয়ে থাকে তাই সে রাতকে বলে, ‘আমার সব বন্ধু তোমাকে সঙ্গ দেবেকিন্তু এই তারাদের মধ্যে যেমন ভাব, তেমন আবার আড়ি মাঝেমধ্যে তাদের ভীষণ ঝগড়া লেগে যায় তখন একে অপরকে ধাক্কা দেয়, আর তাতে দুর্বল তারাটি তাদের বসবাসের জায়গা আকাশ থেকে ছিটকে পড়ে পরে সেই দোষী তারাগুলো কষ্ট পায় কিন্তু যে পড়ে গেছে, তাকে তো আর উঠাতে পারবে না তাই কিছুদিন একসঙ্গে থাকে, পরে ভুলে গিয়ে আবার ঝগড়া করে সাতটি তারার খুব মিল আমরা যেমন একে অপরের মিল দেখলে মানিকজোড় বলি, তেমনি ওদের এই মিল দেখে তাদের নাম দিল সপ্তর্ষিমণ্ডল আরও একটি বাহিনী আছে, তার নাম কালপুরুষ তাদেরও খুব মিল
চাঁদ ও সূর্যের গল্প

রাতের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু চাঁদ চাঁদের সঙ্গে তার খুব ভাব আর এই রাতের বন্ধু পাওয়ার খবর শুনে দিন তো রেগেমেগে অস্থির তাই সেও বন্ধুর খোঁজে বের হলো এবং খুব পাওয়ারফুল এক বন্ধু নিয়ে হাজির হলো তার নাম সূর্য সূর্য যেমন পাওয়ারফুল, ঠিক তেমনি খোলামনের, দিলদরিয়া, হাসিখুশি দিনকে সব সময় উজ্জ্বল আলোয় ভরিয়ে রাখে কিন্তু তার শত্রু মেঘকে দেখলে সূর্য আর ঘর থেকে বের হয় না তখন দিনের খুব মন খারাপ থাকে সেদিন সেও আর হাসে না মেঘ বেশিক্ষণ থাকলে অঝোরে কেঁদেও ফেলে আর ওর কান্না দেখলে সূর্য ঠিক থাকতে পারে না সেও এক গাল হাসি নিয়ে ফিরে আসে সূর্য খুব ধনী তার অনেক আলো সে একদিন শুনল, চাঁদ নামের এক বন্ধু আছে, সে রাতের সঙ্গে থাকে কিন্তু থাকলে আর কী হবে, তার নিজের কোনো আলো নেই তারা নামের ছোট ছোট বন্ধুর আলো নিয়ে রাতকে পথ চলতে হয় তাই সে চাঁদকে তার আলো দিয়ে দিল বলল, ‘রাতের বেলা তো আমার আলো কাজে লাগে না, তাই আমি তোমাকে আমার আলো দিয়ে দিলাম তবে খুব হিসাব করে খরচ কোরো
চাঁদ এত ভালো যে সূর্যের উপকারের কথা সে কোনো দিন ভুলল না আবার সে বলল, ‘তুমি আমার এত উপকার করলে, আমি সারা জীবন তোমার সঙ্গে থাকবতাই দেখো, নিজের কথা রাখার জন্য দিনের বেলায়ও চাঁদ চুপটি করে আকাশে বসে থাকে আবার ৩০ দিনের মধ্যে ১৫ দিন সে আলো ব্যবহার করে, আর ১৫ দিন করে না তাই তো চাঁদে অমাবস্যা আর পূর্ণিমা হয়
তবে সূর্যের মনটা খুব খারাপ কারণ, ‘মানুষ নামের বোকা প্রাণীগুলো চাঁদকে বেশি পছন্দ করে সব সময় চাঁদমামা, চাঁদমামা বলে কাছে ডাকে, গান করে আবার চাঁদ দেখে তারা উৎসবও করে ওই যে রোজা রাখে, আবার ঈদ উদ্যাপন করে আর আমাকে দেখলেই কালো ছাতা মাথায় দেয় এখন অবশ্য রঙিন ছাতাও ব্যবহার করে কিন্তু এতে আমাকে অপমান করা হয় না, বলো? আবার দেখো, বাংলা ভাষার একজন কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘সূয্যি মামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে আমার সঙ্গে এত কমপিটিশনের কী আছে, বুঝলাম না! থাক, তবু শান্তি চাঁদকে সবাই ভালোবাসে বাসুক, তবে আমিও সূর্য আমার ক্ষমতা আমি দেখিয়ে ছাড়ব আমার পেছন পেছন সবাইকে ঘোরাব, এই আমি বলে রাখলামসূর্য তার ক্ষমতার বড়াই দেখাতে পেরেছে কারণ, সে এখন সৌরজগতের প্রধান তাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীসুদ্ধ সবাই ঘোরে
আর ওদিকে বেচারা রাত, সে কখনো অন্ধকারে থাকে, কখনো আলোতে থাকে আবার তার ওই বন্ধুরাও মাঝেমধ্যে আসে তার ধূমকেতু নামের এক বন্ধু আছে সে ৭৫-৭৬ বছর পরপর আসে আর সবাইকে জানিয়ে দিয়েই আসে আবার দেখো, চাঁদের কী ক্ষমতা! পিটপিট করে নড়তে নড়তে এসে সূর্যকে খেয়ে ফেলে নিজে রাজা হতে চায় কিন্তু সে কি আর পারে! এই দুই-পাঁচ মিনিট মুখের মধ্যে নিয়েই আবার উগলে দেয় আর তখন সূর্যগ্রহণ হয় সূর্য তবু তার আলো ফিরিয়ে নেয় না সে যে বড় মনের অধিকারী সূর্য কী বলে, জানো? ‘জেনে রাখবে উপকারীকে বাঘে খায়, তাই বলে কি উপকার করবে না? তা কিন্তু নয় চাঁদ যদি আমাকে দুই মিনিট গিলে শান্তি পায়, পাক! তবু পৃথিবীর সবাই জানবে, চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, সূর্যের আলো নিয়েই সে রাতকে আলোকিত করে এই তো আমার শান্তি

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.