ঘুমের সময় আপনার দেহ ও মস্তিষ্কে যা ঘটে
ঘুমের সময় আপনার দেহ ও মস্তিষ্কে যা ঘটে
ভিউ পয়েন্ট ডেক্সঃ
কখনো ভেবে দেখেছেন ঘুমানোর সময় আমাদের দেহ
ও মস্তিষ্কে কি ঘটে? দেহের
বিশ্রামের জন্যে অতি প্রয়োজনীয়
একটি কাজ ঘুম। এখানে
জেনে ঘুমের যাবতীয় তথ্য।

১. ঘুমের ৫টি চক্র
রয়েছে। এসব চক্র পূরণের
মাধ্যমে পরিপূর্ণ হয় ঘুম। প্রথম,
দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ
চক্র এবং প্রতিটি চক্রের
মাঝে আরো একটি চক্র
সম্পন্ন হয় যাকে রেম
(র্যাপিড আই মুভমেন্ট)
বলে।
২. সু্ষ্ঠু বিপাকক্রিয়া, হরমোনের কার্যক্রম ঠিক রাখা এবং
দেহে শক্তি উৎপাদনে কাজ
নিয়মিত রাখতে ঘুমের দরকার।
৩. ৩৩ শতাংশ মানুষ
ঘুম থেকে উঠে গুরুত্বপূর্ণ
এবং প্রয়োজনীয় পরিকল্পনার নিয়ে সুষ্ঠুভাবে চিন্তার
কাজ করতে পারেন।
৪. ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের
হিপোক্যাম্পাস নামক স্থানে সমস্যা
সৃষ্টি করে। এ স্থানটি
স্মৃতি ধরে রাখতে এবং
মানসিকতা দৃঢ় করতে সহায়কা
করে।
৫. বয়স ও বিভিন্ন
শর্তের ওপর ভিত্তি করে
মানুষের ঘুমের আদর্শ সময়
নির্ধারণ করা হয়। তবে
দিনে নবজাতকদের ১৬ ঘণ্টা, টিনএজারদের
৯ ঘণ্টা, অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক
নারী-পুরুষের ৭-৮ ঘণ্টা
এবং গর্ভবতী নারীর কিছু বেশি
সময় ঘুমের প্রয়োজন।
৬. কয়েক দিন ঘুমের
অভাব ঘটলে আপনি ঘুমে
ঋণে জড়িয়ে পড়বেন। এটা পরিশোধ করতে
ঘুম বেশি বেশি হবে।
ক্রমাগত ঘুমের ঋণ স্থূলতা,
হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং স্ট্রোকের কারণ
হতে পারে।
৭. ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর বিজ্ঞানীরা
একবার এক পরীক্ষায় কয়েকজন
শিক্ষার্থীকে টানা ৬ দিন
প্রতিরাতে ৪ ঘণ্টা করে
ঘুমাতে দেন। এতে তাদের
রক্তচাপ বেড়ে যায়। স্ট্রেস
হরমোন কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
রোগ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন উৎপাদন করে যায়
অর্ধেক। রক্তে ইনসুলিন ক্ষরণের
মাত্রা কমে যায়। পরে
এ ঘুমের অভাব পুষিয়ে
নেওয়ার ফলে তাদের অবস্থা
আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
৮. ঘুমের রেম এবং
নন-রেম নামে দুটো
চক্র রয়েছে। দুই চক্রে মস্তিষ্কের
ভিন্ন অংশ ক্রিয়াশীল হয়
এবং র্যাপিড আই
মুভমেন্টে পার্থক্য থাকে। সাধারণত এক
রাতের ঘুমে ৪-৫টি
রেম এবং নন-রেম
চক্র থাকতে পারে।
৯. ঘুমিয়ে যাওয়ার ৭০-৯০ মিনিটের
মাথায় রেম চক্র শুরু
হয়। প্রতি চক্রের মাঝে
রেম চক্রের ৯০ মিনিটের
মতো বিস্তৃতি থাকে। এ সময়
আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি
পরিবর্তিত হয়। পেশি সাময়িকভাবে
নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। চোখের
অভ্যন্তর নড়াচড়া করে। এ সময়
মস্তিষ্কের ইলেকট্রিক ঢেউ দ্রুত এবং
এলোমেলো হয়। এই চক্রেই
আমারা স্বপ্ন দেখি। গোটা
দিনের পরিশ্রমের পর শক্তি ফিরিয়ে
দিতে এ চক্রটি সবচেয়ে
বেশি কাজ করে।
১০. নন-রেম চক্রে
মস্তিষ্কের ইলেকট্রিক ঢেউ অনেক ধীর,
গোছালো থাকে। এ সময়
চোখ থাকে স্থির।
১১. ঘুমের প্রথম চক্রে
আমরা নড়াচড়া করি এবং সহজে
ঘুম থেকে উঠতে পারি।
পেশি স্থির হতে শুরু
করে এবং চোখ ধীরে
নড়াচড়া করে।
১২. দ্বিতীয় চক্রে নিঃশ্বাস এবং
হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক চলে। পারিপার্শ্বিকতা থেকে
বিচ্ছিন্ন হতে থাকি আমরা।
চোখের নড়াচড়া থেমে যায়। দেহের
তাপমাত্রা কমে আসে। মস্তিষ্কের
ইলেকট্রিক ঢেউ স্তিমিত হতে
শুরু করে।
১৩. তৃতীয় এবং চতুর্থ
চক্রে গভীর ঘুমে থাকি
আমরা। এই স্তরে শক্তি
ফিরতে থাকে এবং পেশির
টিস্যু মেরামত হয়। রক্তচাপ
কমে যায়, নিঃশ্বাস ধীর
হয়, চোখের নড়াচড়া বন্ধ
হয় এবং পেশি নিষ্ক্রিয়
হতে থাকে। তৃতীয় স্তরে
মস্তিষ্কের ঢেউ ধীর হয়ে
আসে যাকে বলা হয়
ডেল্টা। চতুর্থ চক্রে ডেল্টা
ওয়েভ একচেটিয়া দেখা যায়। এ
সময় হরমোন নিঃসৃত হয়।
এগুলো পেশির পরিচর্যায় কাজ
করে।
১৪. এক সপ্তাহে যদি
১০ ঘণ্টার ঘুমের অভাব
ঘটে তবে ছুটির দিন
৩-৪ ঘণ্টা বেশি
ঘুমিয়ে নিন।
১৫. ঘুমের অভাব পূরণ
করতে রাতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়
ঘুমিয়ে যান এবং সকালে
যখন ঘুম ভাঙে তখনই
উঠুন। তাহলে অভাব পূরণ
হবে।
১৬. নিয়মিত ঘুমের ক্ষেত্রে মনে
রাখবেন, ৭-৮ ঘণ্টা
ঘুমের পর আবার বিছানায়
ফিরে যাবেন না।
No comments